রাজশাহী মহানগরীর বড়কুঁঠি খেয়াঘাটে মাত্রাতিরিক্ত ইজারা আদায় ও বাঁশের সেতু তৈরী করে চাঁদাবাজির অভিযোগ!
রাজশাহী মহানগরীর বড়কুঁঠি খেয়াঘাটে মাত্রাতিরিক্ত ইজারা আদায় ও বাঁশের সেতু তৈরী করে চাঁদাবাজির অভিযোগ!
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: মহানগরীর বড়কুঁঠি খেয়াঘাটে মাত্রাতিরিক্ত ইজারা আদায় ও ২০ফুট বাঁশের সেতু তৈরী করে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এই অপকর্মের সাথে প্রকাশ্যে রয়েছেন সের আলী এবং নেপথ্যে রয়েছেন ইজারাদার মোঃ আবু বক্কর কিনু। এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। বাংলা ১৪৩১ সন মেয়াদ পর্যন্ত সাড়ে ৯লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন ইজারাদার মোঃ আবু বক্কর কিনু। সাহেববাজার আসার জন্য এই খেয়াঘাট দিয়েই নৌকা যোগে এবং পায়ে হেঁটে পদ্মা নদীর ওপারের চর-খানপুর, চর- খিদিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা যাতায়াত করে থাকেন। নির্ধারিত টোল চার্ট জন প্রতি ১০/-টাকা, সবজির ঢাকি প্রতি ১০/-টাকা চার্জ থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ৬০/-টাকা। ট্যুরিষ্ট নৌকা থেকে ২০০ টাকা একদিন। কিন্তু ট্যুরিষ্টদের নৌকার টোল আদায়ের বিষয়টি কাগজে উল্লেখ নাই বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা ও জানা যায়, রাজশাহী মহানগরীর পদ্মার চরে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রতি ১০ টাকা করে আদায় করেছে কয়েকজন যুবক। স্থানীয়দের দাবি, একই ঘাটে দুইবার ইজারা নেয়া হচ্ছে। এটা রিতিমতো চাঁদাবাজির সামিল।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর স¤প্রতি খেয়াঘাটের টোলের সাথে যুক্ত হয়েছে বাঁশের তৈরী অনুমানিক ২০ ফিট সেতুতে পথচারীদের কাছ থেকে ১০/-টাকা চাঁদা আদায়। প্রতিদিনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রুয়েট-সহ বিভিন্ন সরকারী, বে-সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও বিনোদন প্রেমিরা মহানগরীর বড়কুঠি ঘাট দিয়ে পায়ে হেঁটে পদ্মার চরে বেড়াতে যায়। যাদের সংখ্যা প্রায় ৫’শত থেকে ১ হাজারের কম নয়। তাদের কাছ থেকে ইজারার নামে জনপ্রতি চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ১০/-টাকা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বেলা ৩টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে, বিভিন্ন বয়সি ছেলে-মেয়েরা পায়ে হেঁটে নদীর -চরে ঘুরতে যাচ্ছেন। সেখানে বাঁশের তৈরী অনুমানিক ২০ ফিট সেতুতে কয়েকজন মানুষ ইজারার নামে জনপ্রতি ১০/-টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। সেই সাথে বস্তা/ক্যারেট প্রতি ৬০-১০০ টাকা হারে আদায় করতে দেখা যায়।
ইজারাদারের লোক রিক্সা-ভ্যান চালক মোঃ লুৎফর জানায়, কাঁচা সবজিগুলো চর- খানপুর থেকে আসছে। আমরা সাধারণ ক্যারেট প্রতি ১০০/-টাকা করে খাজনা নেই। এক ক্যারেটে ১০০-১১৫ কেজি পর্যন্ত মালামাল থাকে। দায়িত্বে আছেন সের আলী ভাই। আমরা তার হয়েই কাজ করছি। ওনার কাছেই আমরা সকল খাজনার টাকা তুলে জমা দেই। নদীর ধারে নোঙ্গরে গিয়ে ২য় বার দেখা মিলে খাজনা আদায়ের চিত্র।
নোঙ্গরে খাজনার বই হাতে নিয়ে থাকা যুবককে খাজনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বস্তা প্রতি ৬০/-টাকা করে খাজনা আদায় করছি।
চরের কৃষক মানিক বলেন, আমি চর-খিদিরপুর থেকে এসেছি। আমরা ক্ষেত থেকে ফল/সবজি তোলার পর ট্রলারে করে চর-খিদিরপুর থেকে বড়কুঠি ঘাটে আসতে খরচ পড়ে ১৫০/-টাকা, এরপর নৌকায় চড়ে এই ঘাটে আসতে মাঝিকে বস্তা প্রতি দিতে হয় ৫০/-টাকা। ঘাটে মালামাল নামানোর জন্য ইজারাদারের লোককে দেওয়া লাগবে বস্তা প্রতি ৬০/- টাকা। প্রতি ২বস্তায় লেবারকে দিতে হয় ৫০০/-টাকা। এরপর বড়কুঠি’র বাঁশের সেতু ও মাটির রাস্তায় দিয়ে পার হওয়ার জন্য ক্যারেট প্রতি গুনতে হয় ৬০/-টাকা। নৌকা ভাড়া, ইজারাদারের খাজনা, ভ্যান ভাড়া দিয়ে অনেক খরচ পড়ে যায়। এখন বাঁশের সেতু ও মাটির তৈরী রাস্তার বাড়তি টোলও গুনতে হচ্ছে ৬০/-টাকা। রাস্তার টোল কেন দিতে হয়?
উত্তরে এই কৃষক বলেন, জানি না ভাই। আমরা চরের মানুষ। সাহেববাজারে যাতায়াতের একমাত্র পথ, বড়কুঠি ঘাট। জানতে গেলে যদি সমস্যায় পড়ি। তাই যা চায় দিয়ে দেই। ইজারার চাঁদা তোলার দায়িত্বে থাকা সের আলী কাছে জানতে চাইলে তিনি রাস্তায়শেষ মাথায় বাঁশের তৈরী সেতু করতে খরচ হয়েছে ১লাখ ৪০ হাজার টাকা। তাই চরে ঘুরতে আসা লোকজনের কাছে ১০/-টাকা নেই।
তিনি আরও বলেন, এই ঘাটটি ১৫ লাখ টাকায় সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নিয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর মোঃ আবু বক্কর কিনু। তিনিই মূলত ঘাটের মালিক। নৌকা থেকে মালামাল নামানোর পর আমরা ৬০ টাকা বস্তা পর্যন্ত নিয়ে থাকি।
তবে যে সকল যুবক রাস্তায় খাজনা নামে চাঁদা তুলছে তারা সবাই এক বাক্যে জানায়, মূল ইজারাদার রাজাহাতার বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর কিনু ভাই। বর্তমানে দায়িত্বে রয়েছেন সের আলী ভাই।
পদ্মার চরে ঘুরতে আসা রাবি শিক্ষার্থী, আশিক, এম শামীম , রায়হান, স্বপন, রনি, রাহি জানায়, চরে ঘুরতে আসলাম। পায়ে হেঁটে যাচ্ছি চরে। কিন্তু জনপ্রতি ১০/-টাকা করে দিতে হলো, বিষয়টা বুঝলাম না। পদ্মার-চর চিড়িয়া খানা হয়ে গেছে নাকি?
পদ্মার চরে ঘুরতে আসা মিন্টু সরকার দম্পত্তী বলেন, চরে মানুষ আসছে বলেই অনেক অস্থায়ী দোকান বসেছে। অনেক লোকজনের রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু পায়ে হেঁটে চরে আসার জন্য মাথা পিছু ১০/-টাকা দিতে হচ্ছে! এটা রিতিমত অন্যায়।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখার কর্মকর্তা আবু নূর মোঃ মতিউর রহমান এর কাছে ইজারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলা ১৪৩১সন মেয়াদ পর্যন্ত সাড়ে ৯লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন বড়কুঁঠি খেয়াঘাটের ইজারাদার। তবে ইজারা আদায়ের সার্বিক বিষয় জানতে হলে রাসিকের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে জানতে হবে। আমি চাইলেও অফিসিয়ালি বক্তব্য দিতে পারি না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স